শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

| ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

কমছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ, ভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

সোহেল হাওলাদার

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৪ জুন ২০২৪

কমছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ, ভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

ফাইল ফটো

বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে পানি কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ভোগ। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তীব্র ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। 

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার পানি নামছে ধীর গতিতে। ২৩ জুন, রবিবার পর্যন্ত সিলেটে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বহমান ছিল সিলেটের দুটি নদীর ৪ পয়েন্টের পানি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাসাবাড়িতে ফিরছেন মানুষ। এক দিনে প্রায় ৩ হাজার মানুষ ঘরে ফিরেছেন। তবে তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। বন্যায় বিধ্বস্ত ঘর মেরামত, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলের কষ্টে আছেন তারা। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকটও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ত্রাণ তৎপরতা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত  সিলেটে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন বন্যাকবলিত ছিলেন। এর মধ্যে মহানগরে ১৫ হাজার। বর্তমানে মহানগরের আটটি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি রয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন। আগের দিন ছিলেন সাড়ে ২২ হাজার। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপত্র।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ছিল বিপৎসীমার নিচে। একই সময়ে কুশিয়া নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ ও শেরপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। তবে বানের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষত। ঘর-গৃহস্থালির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে, গ্রামীণ অবকাঠামো আর রাস্তাঘাটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ছয় দিনের বন্যায়। সুনামগঞ্জ এলজিইডি জানায়, বন্যায় এ বিভাগের প্রায় ১৪০ কিলোমিটার সড়ক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক বানের পানিতে ভেঙে গেছে। এতে করে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কের কেশবপুর এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় ৫০ মিটার সড়ক। ২০২০ সালেও ওই সড়কের দুটি স্থান বন্যায় ভেঙে যায়। এবার নতুন করে আরও একটি ভাঙা হওয়ায় চলাচলের দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনটি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।

মৌলভীবাজারে বন্যার পানি কমলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বন্যার্তদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে দুই দিন থকে বৃষ্টি না হওয়ায়  বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার ২০৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৪৯টি ইউনিয়নে ৩ লাখ ৫১ হাজার ১২২ জন মানুষ পানিবন্দি আছেন। ২০৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, এখানে ৬৩ হাজার ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে যমুনার পানি ৮ সেমি. কমেছে। পানি কমলেও যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কৃষকের তিল, সজ, সবজি ও পাট খেত তলিয়ে গেছে। বসতভিটা চারপাশে পানি ও রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।

গাইবান্ধার তিস্তা, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে। জেগে উঠছে এসব এলাকার প্লাবিত নিম্নাঞ্চল। এতে স্বস্তি ফিরলেও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী মানুষ। এদিকে করতোয়ার পানি ৩১ সেমি. বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়া নদীর পানি ৩১ সেমি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১২ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।  এদিকে তিস্তার পানি ৩০ সেমি. হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ২৭ সেমি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ২২ সেমি. হ্রাস পেয়ে ১৪৬ সেমি. ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৩১ সেমি. হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১১৪ সেমি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও প্লাবিত এলাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। ভেঙে গেছে গ্রামীণ কাঁচা সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে  ফসলের খেত। এ ছাড়া বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় জেলার আদিতমারী উপজেলার গরীবুল্লাহপাড়া, চন্ডিমারী এবং সদর উপজেলার কালমাটির কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৮টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায়। হুমকির মুখে পড়েছে  অন্তত ৫ হাজার বসতভিটা, একাধিক মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছিল। বর্তমানে কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ। তিস্তা নদীবেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কুড়িগ্রামের সবকটি নদনদীর পানি কমে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির  উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যার্তদের দুর্ভোগ এখনো রয়েছে। এ অবস্থায় জেলার নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষগুলো এখনো রয়েছেন বিপাকে। অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেননি। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে এখনো সেখানকার মানুষজন। চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। অনেক স্থানে রাস্তায় খানা খন্দ তৈরি হয়েছে। নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

এজেড