রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

নীরব নদী দখল চলছেই

নাহিদা নাজনীন নূপুর

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নীরব নদী দখল চলছেই

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নীরব নদী দখল চলছেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যেন দেখেও না দেখার ভান করছেন। কোথাও কোথাও ভরাট করে খোদ নদী প্লট করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। দোকান তুলে আদায় করা হচ্ছে ভাড়া। কেউ নদী ভরাট করে তুলছেন অট্টালিকা। কোথাও বাঁধ দিয়ে নদীর প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত নদী দখল করে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। এমন দখলে এরই মধ্যে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৫ শতাধিক নদনদী। 

সরকার ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’- এই বক্তব্য সামনে রেখে নদী উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় ২০১৯ সালে জোরেশোরে শুরু হয় নদী উদ্ধার অভিযান। পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে অভিযানের গতি কমে যায়। বর্তমানে একদিকে চলছে ঢিমেতালে উদ্ধার অভিযান, অন্যদিকে চলছে পুনর্দখল। উদ্ধার-পুনর্দখলের খেলায় গত চার বছরে শুধু রাজধানী ঘিরে থাকা তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী চারটি উদ্ধার সম্পন্ন করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জরিপ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে ১ হাজার ২৭৪টি নদীর হদিস পেয়েছি। নদীগুলোর নামসহ তালিকাও প্রকাশ করেছি। নদী রক্ষা কমিশন গত মাসে ৯০৭টি নদীর খসড়া হিসাব প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ ৩৬৭টি নদীর খোঁজই মেলেনি। যেসব নদীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোর বড় অংশই এখন মৃত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে নদী দখল থামবে না। তিনি বলেন, নদী রক্ষা কমিশন ২০১৮ সালে ৫৭ হাজার নদী দখলদারের তালিকা করার পর নদী উদ্ধারে কিছু পদক্ষেপ দেখেছি। কিছুদিন পরই তা থেমে যায়। আমরা বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে দেখেছি, তালিকা প্রকাশের পর নদী দখলের হার আরও বেড়েছে। ফলে দখলদারদের তালিকাটিও এখন আংশিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের গাড়াদহ নদীর দুই পাশ দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন প্রভাবশালীরা। ফলে সংকুচিত হয়ে গেছে নদী। বরিশালের গৌরনদীর পালরদী নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে সরু হয়ে গেছে নদী। টরকীর চর এলাকায় পালরদী নদীর তীর ও নদীর মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করা হয়েছে।

বরগুনার খাকদন নদীর দুই পাড় দখল করে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নদীটির দক্ষিণ পাড়ে প্রেস ক্লাব সড়কের উত্তর প্রান্তে থাকা ডিসি-এসপির লঞ্চঘাট দখল করে বাড়ি করেছেন তাদেরই কর্মচারীরা। কেউ কেউ সেই বাড়ি বিক্রিও করে গেছেন। অবৈধভাবে দখল করা খাকদন নদী থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের পরিবর্তে দখলকারীদের লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা দিয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস। বর্তমানে পূর্বদিকে বুড়ীশ্বরের মোহনা পর্যন্ত দখল ও ভরাটের কারণে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে বিষখালী নদী দখল করে পাথরঘাটা আর বামনা উপজেলা অংশে করা হয়েছে ইটভাটা।

নারায়ণগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যা নদীতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৪৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় প্রায় দেড় বছর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগে ফের দখল হয়ে যায় নদীতীর। চলতি বছরের মার্চে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পর আবারও ৭ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু ডকইয়ার্ড ও বসতবাড়ির কারণে ওয়াকওয়ে ও সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপন করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বগুড়ার বুক চিরে প্রবাহিত করতোয়া নদীর দুই পাড় অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দোকান থেকে আদায় হচ্ছে ভাড়া। কোথাও কোথাও আবার নদীর মধ্যেই সীমানাপ্রাচীর দিয়ে দখল করে ভবন তৈরি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বর্তমানে নদীর তীরবর্তী ২৮টিরও বেশি স্পট দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ চললেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি এসব নদনদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও অন্যান্য জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে নদনদী দখল রোধের পাশাপাশি নিয়মিত খননের মাধ্যমে নাব্য ধরে রাখতে হবে।