রানিং স্টাফদের মাইলেজ সমস্যা বুধবারের (২৯ জানুয়ারি) মধ্যে সমাধান করা হবে— রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের এমন আশ্বাসে মধ্যরাতে কর্মবিরতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন।
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান রেলওয়ের সব রানিং স্টাফদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। সে হিসেবে সকাল থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে।
এদিকে সোমবার দিনগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত মোট সাড়ে ২৬ ঘণ্টা সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে আজ সকাল ৯টার পর থেকে সিডিউল ট্রেনগুলো প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবে। কারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে মধ্যরাতে জানিয়েছে আন্দোলনের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এসব ট্রেনের টিকিট রিফান্ড নিয়ে শতভাগ টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হবে। এর আগে ২৮ জানুয়ারির সব ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করে রেলওয়ে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিনগত রাতে রেলপথ উপদেষ্টার বাস ভবনে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আরও অনেকে। পরে বৈঠক শেষ হলে রাত আড়াইটার সময় সংবাদ মাধ্যমের সামনে রেলওয়ের যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।
উল্লেখ্য, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬২ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল। সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।
২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছরের ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করে।
সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১০ দিন সময় চাইলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু এর মধ্যও কিছু করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। পরে ১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়, ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালাবে না তারা। তারই প্রেক্ষিতে গত সাড়ে ২৬ ঘণ্টা ট্রেনে উঠেনি রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।