আমাদের সবার আগে এটা জানা উচিত কিভাবে এই কোটা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটে। ২০২৪ এর আগে ২০১৮ তেও সর্বপ্রথম চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয়। পুর্বের সেই আন্দোলনের পর কোটার ভিত্তিতে চাকরীর সুযোগ পুরোপুরি বাদ হয়ে যায়। তবে ২০২৪ সালে এসে আদালতে কোটা নিয়ে একটি রায় ঘোষণার পর আবার নতুন করে এই আন্দোলন শুরু হয়।
২০১৮ তে কোটা নিয়ে বেশ কিছু দাবি ছিলো। তা হলো-
১. চাকরিতে কোটায় নিয়োগের জন্য আলাদা করে পরীক্ষা নেবার কোন ব্যবস্থা করা যাবে না।
২. সকল প্রকার সরকারি চাকরির পরীক্ষায় একাধিকবার কোটা সুবিধা নেওয়া যাবে না।
৩. সকল সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. চাকরিতে কোটা সংস্কারের মাত্রা ৫৬% থেকে কমিয়ে ১০% এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
৫. কোটা পুরনের জন্য যোগ্য প্রার্থীকে পাওয়া না গেলে মেধার ভিত্তিতে ওই পদে নিয়োগ দিতে হবে। কোন পদই খালি রাখা যাবে না।
সেই সাথে ১৩ মার্চের মধ্যে সর্বপ্রথম দাবি গুলো মেনে নেবার জন্য একটি আলটিমেটা দেওয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে তা ৯ এপ্রিল বেলা ৩ টায় শাহাবাগ জমা হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
কোন কিছুতেই যেনো এই আন্দোলনকে থামানো সম্ভব হচ্ছিলো না। পরে ১১ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সকল প্রকার কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
২০২৪ এর কোটা আন্দোলন:
২০১৮ সালে সংসদে সকল ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষনার পরে ২০২১ সালে গিয়ে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা হাইকোর্টে আপিল করেন। যা কিনা ৬ ডিসেম্বর কোটা পরিবর্তনের সকল নথিপত্র বাতিল করে দেয়। এতে করে সকল ধরনের কোটা পুনরায় পুর্নজীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী করে। যা কিনা সেই আপিল নিয়ে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের পুর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে ঘোষণা করা হয়।
সে সময় ছাত্ররা সরকারের উপর বেশ চরমভাবে ক্ষেপে যায়। আদালত যখন ৪ জুলাই শুনানি পিছিয়ে দেয়, ঠিক তখনি ছাত্ররা এই আন্দোলনটাকে আরও প্রচন্ড আকারে তীব্রতর করে ফেলে। পরে তা গিয়ে ৬ জুলাই কোটা বিরোধী একটা স্বমনয়ক দল গঠন করে সারা দেশে আন্দোলনের ডাক দেয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে একটা ভাষণ দেন। যে ভাষণে তিনি 'রাজাকার' নামক কথাটা উল্লেখ করেন। আর এতে করে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি করে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
ঠিক সে সময় শেখ হাসিনা জানান 'কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নাই'। তার এই কথাতে যেনো শিকাক্ষীদের মাঝে আরও রাগ প্রকাশ পায়। তিনি এ সময় এই সকল শিক্ষার্থীদেরকে 'রাজাকার' ট্যাগ দেন। তার একটি মাত্র ভুল শব্দের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সারা দেশে আন্দোলনের ডাক দেন।
১১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হল থেকে নিজেদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিয়ে তারা মিছিল বের করে। রাজনৈতিক দলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নানানভাবে আক্রমণ করতে থাকে। তবে কোন কিছুতেই এই সকল শিক্ষার্থীদের যেনো দমিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে দেশের সকল পেশার, শ্রেণীর মানুষও এই আন্দোলনে যোগ দেয়।
এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাইদ ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া এক গুলিতে নিহত হন। এতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি করে ক্ষিপ্ত হতে ওঠেন। আবু সাইদের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে প্রাণ হারায়।
শেষে হাজারো ঝড় ঝাপটার পরিস্থিতি অতিক্রম করে কোটা আন্দোলনকারী সমন্বয়করা ৫ আগষ্ট লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আর ঠিক সেই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
বৈষম্যহীন ভাবে মেধার জোরে চাকরীর জন্য তরুণ সমাজ যে কাজ করেছেন তা জাতি সারাজীবন মনে রাখবে। তাই আমি মনে করি, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের নৈপথ্যে তরুণ সমাজের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তরুণ সমাজ চাইলে গোটা একটা দেশের ইতিহাসকে বদলে দিতে পারে।
তাই আমার মতে, পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে তরুণ সমাজকে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
লেখক: অন্তরা আফরোজ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্ল্যাটফরম, তেজগাঁও কলেজ।
"এই বিভাগে প্রকাশিত মুক্তমতের সকল দায়ভার লেখকের নিজের। ক্যাম্পাস বাংলা কোনভাবেই এই বিভাগের লেখক কিংবা লেখার বিষয়বস্তুর দায়ভার নিচ্ছে না।"