রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মুক্তি’ দেবে কে

মো. আব্দুন নূর

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৮ আগস্ট ২০২৩

ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মুক্তি’ দেবে কে

ফাইল ফটো

দেশের সর্বস্তরের জনগণের ঘাম ঝরা পরিশ্রমের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলে। আপামর জনগণের প্রত্যাশা হলো যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবেন। দেশের অরাজকতা, স্বৈরচারিতা, অপরাজনীতি, অনিয়ম-দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার, কুসংস্কার, ষড়যন্ত্র সমূলে ধ্বংস করে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। দরিদ্র, অসহায়, বিপদগ্রস্ত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবে, তাঁদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের পক্ষে হুংকার ছাড়বেন।

জ্ঞান–বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দেশের মঙ্গলের জন্য নতুন নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞান উদ্ভাবন করবেন। দেশের কল্যাণার্থে নতুন ধারণা, নতুন কলাকৌশল, উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবেন। সর্বোপরি মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়ন সাধন করবেন।

অথচ জনগণের টাকায় লালিত-পালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে সমৃদ্ধ করা, কিন্তু তাঁরা তা ভুলতে বসেছেন।

শিক্ষার্থীরা তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব ভুলবেনই না কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই এখন নিজেদের পদমর্যাদা ভুলে গেছেন। এই দেশের সংকটকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভূমিকার ইতিহাস অবিস্মরণীয়। এমন সমৃদ্ধ ইতিহাসের অনুসারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দায়বদ্ধতা, চেতনা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার কথা ছিল।

পড়াশোনা, জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, উদ্ভাবন—এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রের বহির্ভূত হয়ে যাচ্ছে। নামমাত্র ওপরে ওপরে শিক্ষার হালকা-পাতলা প্রলেপ আছে, ভেতরে–ভেতরে অপরাজনীতি, দলাদলি, দলান্ধতা, অনিয়ম, দুর্নীতি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক এখন শিক্ষক হিসেবে ক্লাসে যান না, দলবাজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পেয়েছেন বলে কেবল ক্লাসে আসা-যাওয়া করেন। আর শিক্ষার্থীরাও উপস্থিতি নম্বরের জন্য কেবল ক্লাসে আসা-যাওয়া করেন। শিক্ষকেরা এখন গবেষণা করেন না, পদোন্নতির জন্য দল চর্চা করেন। নিজের সমর্থিত রাজনৈতিক দল দেশের জনগণের ওপর অন্যায়, অত্যাচার করলেও তাঁরা সুখের হাসি হেসে দলের গুণকীর্তন করেন।

জ্ঞানচর্চা বা গবেষণা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বললেই চলে। পাঠদান ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কোনো সৃজনশীলতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে পরীক্ষা নেয় গত সালগুলোর হুবহু প্রশ্নপত্রে। শিক্ষাবর্ষ জোড় সাল হলে গত জোড় সালগুলোর প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়। আর শিক্ষাবর্ষ বিজোড় সাল হলে গত বিজোড় সালগুলোর প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়। এমন গতানুগতিক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সারা বছর পড়াশোনা করার প্রয়োজন বোধ করেন না। ফটোকপির দোকান থেকে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরের শিট কিনে পরীক্ষার রাতে একনজর দেখেই অনার্স-মাস্টার্স পাশের সনদ অর্জন করছেন। এমন পরীক্ষাপদ্ধতি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বইপড়া, জ্ঞানচর্চা, শিক্ষকের সাহচর্য, গ্রন্থকার থেকে দূরে অবস্থান করছেন, ফলে কেউ অপরাজনীতি করে সময় নষ্ট করছেন, কেউবা কারণে-অকারণে অলসতায় সময় নষ্ট করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি দেশের জন্য নয়, বিশ্ব সমাজের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। আগামী দেশের কল্যাণার্থে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতি হতে অবমুক্ত করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মুষ্টিমেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং স্বাধীনভাবে শিক্ষা-গবেষণার ফলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কোনো দলের নয়, দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। দেশের জনগণের স্বার্থে সব অন্যায়-অত্যাচার, অনিয়ম-দুর্নীতি, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেট প্রতিহত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই শিক্ষার ভিত্তিতে দেশ-জাতি এবং স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

- লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

"এই বিভাগে প্রকাশিত মুক্তমতের সকল দায়ভার লেখকের নিজের। ক্যাম্পাস বাংলা কোনভাবেই এই বিভাগের লেখক কিংবা লেখার বিষয়বস্তুর দায়ভার নিচ্ছে না।"