বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

| ২ মাঘ ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

ক্যাম্পাসে নবীনদের ভুল ধরিয়ে দেবে কে?

রুহুল আমিন

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২৮ আগস্ট ২০২৩

ক্যাম্পাসে নবীনদের ভুল ধরিয়ে দেবে কে?

করোনা মহামারি কাটিয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবারও মুখর নবীনদের পদচারণে। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ক্যাম্পাসের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মনে। নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সব সময় সবার মনে উৎসাহ–উদ্দীপনা কাজ করে। কেমন হবে নবীনেরা! কেমন হবে তাদের ব্যবহার! নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারবে তো!
অন্যদিকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে অভিভাবকেরা থাকেন দুশ্চিন্তায়। কীভাবে কী করবে তাদের সন্তান, কী খাবে, কোথায় কাদের সঙ্গে মিশবে, কোথায় যাবে—এসব নিয়ে হাজারো ভাবনা উঁকি দেয় তাঁদের মনে।

বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখেন তাঁর পার্শ্ববর্তী কোনো এলাকা থেকে কেউ সেই ক্যাম্পাসে পড়ছেন কি না। কেউ যদি থেকে থাকেন তাহলে তার থেকে বিস্তর তথ্য নেওয়া যাবে। এবং এলাকার সেই বড় ভাই বা বোনের ওপর ভরসা করেই তিনি তার সন্তানকে ক্যাম্পাসে পাঠান।

ক্যাম্পাসে এসে নবীনেরা আরও নবীন হয়ে যান। তাঁরা আসলেই কেন জানি তাঁদের সিনিয়র ভাই অথবা বোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যান। যেকোনো কাজেই পরামর্শ নিতে চান সিনিয়রদের এবং এটাই তাঁকে উপকৃত করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে নবীনেরা আসেন স্বপ্নের ক্যাম্পাসে। তাঁদের সবার আচার–ব্যবহার আলাদা এবং বৈচিত্র্যময়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটা জায়গা, যেখানে বৈষম্যের কোনো স্থান থাকে না। কেউ কোটিপতির সন্তান কেউ বা কৃষক বাবার। কিন্তু এসব কোনো সময় ক্যাম্পাসের বন্ধুদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে পারে না। এবং এই মতাদর্শ নবীনোরা পেয়ে থাকেন তাঁদের সিনিয়র ভাই অথবা বোনের পরামর্শ থেকে।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নবীনেরা সব সময় তাঁদের বড়দের অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। বড় ভাই বা বোনেরা চান তাঁদের ছোট ভাই বা বোনেরা যেন কোনো বিপদে না পড়েন। তাঁদের আচার–ব্যবহার যেন মার্জিত ও সুন্দর হয়। নবীনেরা যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে তাঁদের ভুল ধরিয়ে দেন বড়রা। কোথায় কখন কীভাবে চলতে হবে, কোথায় কোনো কথা বলতে হবে, কী করলে ভালো থাকা যাবে, কী করলে নিজের ক্ষতি হবে, কী করলে ক্ষতি হবে না, তার বিস্তর আলাপ হয় নবীন শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাসের পুরোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ যেন চিরচেনা একটি শিকল, বন্ধন।

কিন্তু অতিসম্প্রতি এই বন্ধনগুলো বিলুপ্তির পথে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেঙে দিয়েছে ক্যাম্পাসের সেই শিকল। কিছু দুষ্ট লোকের অস্বাভাবিক আচরণ বদলে দিয়েছে আমাদের অসীম ভ্রাতৃত্বকে। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নবীন শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়, যা আসলে কাম্য নয়।

এবারও নবীন শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। বহিষ্কারের পাশাপাশি পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ঢের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।  

কিন্তু এ কথাও সত্য, ক্যাম্পাসের নবীনেরা আমাদের কারও না কারও ভাই-বোন। তাঁরা মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রঙিন আঙিনায় পা দিয়েছেন।  কেউ জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আসলে কেমন। এখানে কেমন ধরনের মানুষের চলাচল বেশি। নবীনেরা জানেন না কীভাবে শিক্ষকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন হয়। কী পড়তে হবে, কতটুকু পড়তে হবে, তার ধারণা তাঁরা তাঁদের বড় ভাই–বোনের সহযোগিতায় জেনে যান।

অতিসম্প্রতি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তা সাধারণ মানুষের মনকে নাড়া দেয়। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা নবীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। নবীনেরাও ভয় পান তাঁদের বড়দের। এবং এসব ঘটনার শাস্তিস্বরূপ নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়, যা আসলেই কাম্য নয়। এসব বিষয় আমাদের ছোট ও বড়দের বন্ধন ভেঙে দিয়েছে। ছোটরা তাদের বড়দের কাছে যেতে পারছে না, বড়রা তাদের স্নেহাশিস ছোটদের কাছে যেতে পারছে না।

শুধরে দিতে পারছে না কোনো ভুল। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ভেঙে পড়বে এবং ছোটদের ভুলগুলো দেখিয়ে দেবে কে! এবং কে শুধরে দেবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

- লেখক: শিক্ষার্থী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

"এই বিভাগে প্রকাশিত মুক্তমতের সকল দায়ভার লেখকের নিজের। ক্যাম্পাস বাংলা কোনভাবেই এই বিভাগের লেখক কিংবা লেখার বিষয়বস্তুর দায়ভার নিচ্ছে না।"