শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

| ৩ কার্তিক ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

আন্দোলনের নামে ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি’ করলে রুখে দেওয়ার ঘোষণা ছাত্রলীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১১ জুলাই ২০২৪

আন্দোলনের নামে ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি’ করলে রুখে দেওয়ার ঘোষণা ছাত্রলীগের

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তা না করে আন্দোলনের নামে শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি করলে রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। একইসঙ্গে সময়োপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কোটাব্যবস্থার একটি যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত  সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন লিখিত এক বক্তব্যে এই দাবি জানান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত।

লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থায় একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান ও সংস্কার আনা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোনও অবরোধ বা জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে স্পট ডিসিশন গ্রহণ করা নয়। বরং একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামোর প্রেক্ষিতে একটি যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনও সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান না জানিয়ে, এমনকি আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই কেন এই অনিঃশেষ আন্দোলন?’

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম পরিচালনা কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, তীব্র তাপদাহ এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় সড়ক অবরোধ, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে তাদের অবিলম্বে ফিরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে, এটি সবাই প্রত্যাশা করে।’

২০১৮ সালের পরিপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালের পরিপত্রের যৌক্তিক সংস্কার চাই। আজ আমরা তথ্যের মাধ্যমে দেখিয়েছি কেন কিছু কোটা দরকার।‘

এসময় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের কারণে নারী, জেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার কিছু তথ্য সাদ্দাম হোসেন তুলে ধরেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, কোটা থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অপরদিকে কোটা তুলে দেওয়ার পরও ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ, ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। ৪০তম বিসিএসে দেশের ২৪টি জেলা থেকে এবং ৪১তম বিসিএসে ১৮টি জেলা থেকে একজনও বিসিএস পুলিশে সুপারিশকৃত হয়নি। এছাড়া কোটা থাকা অবস্থায় ৩১ থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন সুপারিশকৃত হন। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন এবং ৪০ ও ৪১ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন ২ জন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ কোনও বাধা দেবে কিনা জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা তাদের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী সমাজকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করলে ছাত্রলীগ তা রুখে দেবে।’ আজ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, এটিকে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।