আন্তর্জাতিক নাগরিক হয়ে উঠতে অন্য ভাষার চর্চা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
‘বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৪’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা মানুষের অধিকার। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাক্ষরতা বিস্তারে এ সাফল্যের জন্য আমরা ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো পুরস্কার পেয়েছি। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। আমরা অবৈতনিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। শুধু অবৈতনিক শিক্ষা নয়; আমরা উপবৃত্তি দিচ্ছি, বইপত্র দিচ্ছি, স্কুলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা কোনও কোনও স্কুলে হচ্ছে; সেটিকে আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি।
ভাষা ছাড়া অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলে তাদের ডেভেলপ হতে সমস্যা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুধু দেশের নাগরিক নই, আমরা এখন আন্তর্জাতিক নাগরিক।
ডা. বিধান রঞ্জন বলেন, যোগাযোগ, যাতায়াত, অর্থনীতি—সব দিক দিয়ে বিশ্ব একীভূত বিষয় হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য আমাদের অন্য ভাষা চর্চা করা প্রয়োজন। আমাদের সন্তানদের যদি বহু ভাষাভাষী করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা দেশের জন্য সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে।
দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পটি একটি ভালো প্রকল্প। এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। যদি এতে আশানুরূপ ফলাফল হয়, তবে চেষ্টা থাকবে সেটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা শুধু মানুষকে স্বাক্ষর করে তুলতে চাই না, তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই; যেন তারা কর্মজীবনে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
সাক্ষরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাক্ষরতার মাধ্যমে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন হয়ে যায়। একজনকে সক্ষম করে তোলা মানে তার জ্ঞানের মাত্রা অবারিত হয়, অভিজ্ঞতা অবারিত হয়, প্রকাশ অবারিত হয়। স্বাক্ষর মানুষ একটি জাতির জন্য সম্পদ।
বিপুল জনসংখ্যার বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পদ হতে পারে, এমনটা মনে করে উপদেষ্টা বলেন, যদি তাদের স্বাক্ষর করে তুলতে পারি, দক্ষ করে তুলতে পারি। মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে তার ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে। সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার ‘লিপি’ আবিষ্কার। ‘লিপি’ আবিষ্কার সভ্যতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং বিষয়টি মানুষকে আরেকটি স্তরে নিয়ে গেছে।‘
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক নুরজাহান খাতুন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশে ইউনেসকোর প্রতিনিধি সুসান ভাইজ প্রমুখ।