নাসিম আহমেদ মাসুম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে বিবস্ত্র করে গণরুমে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ‘হল চালাই আমি, দায় আমার’ বলা ‘বিচারকারী বড়ভাই’ নাসিম আহমেদ মাসুমকে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত তিন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও এক শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির ১৩ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এক বছরে জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাগর প্রামাণিক ও একই বিভাগের উজ্জ্বল হোসেন এবং শারিরীক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মুদ্দাসসির খান কাফি। তারা সকলেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ মর্মে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রার বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনপূর্বক লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাসিম আহমেদ মাসুম এবং আইসিটি বিভাগের মিসনো আল আসনাওয়ীকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। অভিযুক্তরা সকলেই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
জানা গেছে, লালন শাহ হলের গণরুমের দায়িত্বে থাকা ‘বড় ভাই’ নাসিম আহমেদ মাসুম। র্যাগিংয়ের ঘটনার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারী অভিযুক্ত ও ভূক্তভোগীদের নিয়ে ১৩৬ নং কক্ষে (গণরুমে) অনুষ্ঠিত ‘সমঝোতা বৈঠক’ করেন তিনি। বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনা যেন জানাজানি না হয় সেজন্য কয়েক দফায় বৈঠক করেছিল হলের কয়েকজন ‘বড় ভাই’। এতে অন্তত ২০ জন উপস্থিত ছিল। বৈঠকের ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের একটি অডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে নির্যাতনের ভয়াবহতা ও বাইরে যেন জানাজানি না হয় সে জন্য হুমকি ধাকমি দেওয়া হয়েছে।
এসময় নাসিম বলেন, ‘আমার রুমে গেলি। আমাকে কিছু বলিসনি। তোর কী বলা উচিত ছিল না? হল চালাই আমি দায়ভার আমার। নিউজ হলি তো আমার নামে হইতো। আমাকে জানাইসনি তোর জেলা কল্যাণের ভাইকে জানাইসিস। তাইলে কথাটা বাইরে গেলো কী করতি? তোরে হলে তুলেছে একজন। দায়ভার আরেকজনের। বিচার দিতে যাস আরেক ভাইয়ের কাছে।’
এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী মাসুম। জয় নেতা হওয়ার পর লালন শাহ হলে উঠলে মাসুম গণরুম দেখাশোনা করেন এবং শিক্ষার্থীদের তোলেন। তিনি এখনো হলের গণরুম দেখাশোনা করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতভর ইবির লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষ তথা গণরুমে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিং করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ওই শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে রড দিয়ে মারধর করা, পর্নগ্রাফি দেখানো ও টেবিলের ওপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। ‘নাকে খত’ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভয় দেখিয়ে তিন-চার বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি।
এআই