রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি জমা দিলেন আন্দোলনকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১৪ জুলাই ২০২৪

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি জমা দিলেন আন্দোলনকারীরা

সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। 

১২ জন প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম,আসিফ মাহমুদ, মো. মাহিন সরকার , আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসউদ; জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আশিক আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেরুন্নেসা নিদ্রা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ- সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ও রশিদুল ইসলাম রিফাত, ইডেন কলেজের সহ-সমন্বয়ক সুমাইয়া আখতার।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের পরিপত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। কেননা শিক্ষার্থীরা সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিল।

প্রথমত, কোটার অসহনীয় মাত্রা মানে দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীদের দাবি ও আন্দোলনের সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার তা নিশ্চিত করতে ও একটি দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।

দ্বিতীয়ত, কোটা পদ্ধতি না থাকলে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। তৃতীয়ত, উক্ত পরিপত্রটি শুধু ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারির চাকরির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৫ শতাংশ কোটাকে ছাত্রসমাজ যৌক্তিক মনে করে। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে (সর্বোচ্চ ৫%) এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।

স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রপতিকে আন্দোলনকারীরা বলেন, ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে ঝড়-বৃষ্টি-খরতাপকে উপেক্ষা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের কারণে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনোই চাই না। আমরা দ্রুতই পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই।

ছাত্রসমাজ আশা রাখে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' এর ব্যানারে এ পদযাত্রা শুরু হয়। এই পদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগদান করেন।

গণপদযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগ, মৎস ভবন, হাইকোর্ট, সচিবালয় হয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে আসে। জিরো পয়েন্টে এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গণপদযাত্রাটি শিক্ষা ভবন চত্বরে পুলিশের বাধার মুখে পড়লে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে জিরো পয়েন্টে পুনরায় পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়েন। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থানের পর পুনরায় পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দিকে যাত্রা করে। তবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে শিক্ষার্থীদের বঙ্গভবনের নিরাপত্তাজনিত কারণে পুনরায় বাধা দেয় পুলিশ।

এসময় পুলিশ বাহিনীকে  জলকামান,টিয়ারশেল, বেয়নেট নিয়ে প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশের উর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনার পর ১২জনের একটি প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যাওয়া এবং স্মারকলিপি প্রদান করে ফিরে আসা পর্যন্ত  আন্দোলনকারীরা গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন। প্রতিনিধি দল বঙ্গভবন থেকে ফিরে এলে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।