রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

স্লোগান দেন ‘চাইতে গেলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’

মধ্যরাতে উত্তাল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৫ জুলাই ২০২৪

মধ্যরাতে উত্তাল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

ছবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ১৪ জুলাই মধ্যরাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কারপন্থি আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশাল মিছিল করেন তারা। এ সময় অনেক স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এদিকে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তিন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা হলেন- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা নিয়ে করা মন্তব্য ঘিরে মধ্যরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হতে শুরু করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন তারা। সাধারণত রাত ১০টার পর মেয়েদের হলগুলোয় প্রবেশ-প্রস্থান নিষিদ্ধ হলেও তারা বের হয়ে যোগ দেন মিছিলে। এ সময় সূর্যসেন হল ও বিজয় একাত্তর হলের গেটে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যেতে বাধা দেন হল ছাত্রলীগ নেতারা।

কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিলের বহর নিয়ে তাদের বের করে নিয়ে আসেন। ওই মিছিলের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘এক দুই তিন চার, আমরা সবাই রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনো সেই দেশের ছাত্রজনতাকে রাজাকারের বাচ্চা বলতে পারেন না। তাঁর এ কথার প্রতিবাদে আমরা এত রাতেও রাস্তায় নেমেছি। শেখ হাসিনাকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

জাবি প্রতিনিধি : ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে গভীর রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা। দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে স্লোগান দিতে দিতে বটতলায় জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করেন তারা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে সম্বোধন করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক এবং চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার পাঁয়তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল ও কটেজ থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে জিরো পয়েন্টে প্রধান ফটকের সামনে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাঁটি’ ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ছাত্রলীগের কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মিছিল শেষে রাবির মেইন গেটসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,  বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করেন কিছু শিক্ষার্থী। মুহূর্তে শত শত শিক্ষার্থী বিভিন্ন হল থেকে মিছিলে যুক্ত হন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : রাত ১২টার দিকে কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ মিলিত হয়। এরপর মিছিলটি নিয়ে পুনরায় জিয়া মোড়ে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ঘিরে গতকাল মধ্যরাতে ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে এ স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : গতকাল রাত ১১টার দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হল শেখ লুৎফর রহমান হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাঁটি’, ‘শেরেবাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাঁটি’-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে কাঁঠালতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে একমাত্র ছাত্রী হলের তালা ভেঙে মিছিলে যোগ দেন নারী শিক্ষার্থীরাও। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ ‘কে বলছে, কে বলেছে সরকার’ স্লোগানে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর কিছুক্ষণ সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্ক, বাংলাবাজার মোড়ে ঘুরে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে যান।