বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

| ২ মাঘ ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

মানববন্ধন আসতে বাধার মুখে কুবি শিক্ষকরা, শেষে দাঁড়ালো ৬ জন

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১ আগস্ট ২০২৪

মানববন্ধন আসতে বাধার মুখে কুবি শিক্ষকরা, শেষে দাঁড়ালো ৬ জন

দেশব্যাপী শিক্ষার্থী হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধনে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসতে চাইলে সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত স্থানীয় লোকজন বাঁধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ছয় জন শিক্ষক মানববন্ধনে দাঁড়ান।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল ১১ টা ৫৬ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

মানববন্ধনে উপস্থিত ছয় জন শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শিলা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক জয় রাজ বংশী, বাংলা বিভাগের প্রভাষক গোলাম মাহমুদ পাভেল। 

মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন বলেন,  আমরা সবাই এখানে দাড়িয়েছি একটা বিচারহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। শুধুমাত্র নিজের মৌলিক অধিকার চাইতে গিয়ে যেভাবে শতশত শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ সেখানে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে সেটা গণহত্যা। এই গণহত্যার মধ্যে দিয়ে যা করা হয়েছে সেটি একবারে নিজের যে ক্ষমতা সেটির চর্চা। যেটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এই নির্মম  গণহত্যার বিচার চাই এবং তীব্র প্রতিবাদ করছি।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গত ১৮ জুলাই কোটবাড়ী বিশ্বরোডে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া তার সন্তান সারাফ সামির জামান মেঘের মা ড. কামরুন নাহার শিলা  বলেন, আমার সন্তানও আহত হয়েছে আমি সেই কারনে আসিনি। শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের উপর যে নিপীড়ন শিক্ষার্থীদের হত্যা এই বিষয়ে সকল শিক্ষকদের মত আমিও মর্মাহত ছিলাম। আমাদের আরো আগেই নামা উচিত ছিলো। আমরা আসলে লজ্জিত। আমার নিজের জীবনে যেহেতু একটা দুর্বিপাক ঘটে গেছে এর কারনে আমি আগে পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমার ছেলে আহত হয়েছে। আমার ছেলে মারাও যেতে পারতো। সেদিন বুঝতে পেরেছি এতো এতো শিক্ষার্থীদের পরিবার কি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছে! আমার ছেলে ছোট তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে। আমরা দেখেছি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর কীভাবে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে। এই যে একটা নৈরাজ্য অবস্থা তৈরী হয়েছে তার দ্রুত নিরসন চাই আমরা।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশে আটকে দেয়ার ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হল ভূঁইয়া বলেন, কর্মসূচিটি সকাল ১১ টায় করার কথা থাকলেও আমরা করতে পারিনি। আমাদের অনেক সহকর্মীকে আটকে দেওয়া হয়েছে কোটবাড়ি। তারা শিক্ষক পরিচয় দিয়েও তাদের কর্মস্থলে আসতে পারেননি। প্রক্টরকে জানানো হলেও আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা কোন ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না? আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, যে প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার দায়িত্ব জড়িত, আমার কাজ জড়িত, আমার ইমোশন জড়িত, আমার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা কেন আসতে পারবো না?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  পলিটেকনিক মোড়, ক্যাডেট কলেজ মোড় ও আনসার ক্যাম্পের সামনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সব ধরনের যানবাহন চেক করছেন। যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিমুখে  যেতে চাইছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিল। ছাত্রলীগ, যুবলীগের বাধার মুখে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম, অধ্যাপক খলিফা মোহাম্মদ হেলাল, আনোয়ার হোসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান। 

গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, আমরা কোটবাড়িতে আসার পর কয়েকজন মানুষ আমাদের পথরোধ করে। আমরা শিক্ষক পরিচয় দিলেও নমনীয় হয়নি। আমরা প্রক্টরকে জানিয়েছি, রেজিস্টারকে জানিয়েছি। দীর্ঘ এক ঘন্টা অপেক্ষা করেও কোন পুলিশ বা কারো থেকে কোন সাহায্য আসেনি। আমাদেরকে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। 

কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, একজন শিক্ষক জানিয়েছিলেন যে উনি আসতে পারছিলেন না। সাথে সাথে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে জানিয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব ক্যাম্পাসের ভিতরে। বাইরে যদি কোন ঘটনা ঘটে সেটার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হয়। সেটা আমরা করেছি।

এজেড