মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ১ আশ্বিন ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

যেমন ক্যাম্পাস চান পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা 

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যেমন ক্যাম্পাস চান পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা 

আব্দুল মকিম, তামিয়া তামান্না, রাশেদুল ইসলাম ও ওয়াহিদুজ্জামান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জনমানুষ। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সংস্কারের দাবি তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও সংস্কারে সোচ্চার। তারা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চান যেখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি থাকবে না এবং শিক্ষার মান উন্নত হবে। ছাত্র আন্দোলনে নতুন সরকার গঠনের পর কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চান শিক্ষার্থীরা—তা নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি যুবায়ের আহমেদ । 

বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্র : আব্দুল মকিম

ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল মকিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা। এটি কেবল জ্ঞান বিতরণের জায়গা নয়, বরং সমাজের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রও। বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবিকতা, ও সামাজিক দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু শিক্ষাবিষয়ক জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট নয়; তাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চাও প্রয়োজন। পাশাপাশি, গবেষণার মাধ্যমে সমাজের চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজা এবং সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে তা সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারে, এবং একটি সুষ্ঠু ও উন্নত সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা হতে হবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নতুন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটানো, যা সমাজকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

সব রকমের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ চাই : তামিয়া তামান্না

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী তামিয়া তামান্না বলেন, পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে যে পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করেছে, তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সমতাভিত্তিক এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস। আমরা চাই এমন একটি ক্যাম্পাস, যেখানে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো ঘটনার পর আমরা দেখেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের মধ্যকার দূরত্ব শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করছে। আমরা চাই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আধিপত্য বা ভয়ভীতির পরিবেশ না থাকুক, সেটাই আমাদের মূল প্রত্যাশা। এছাড়া, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম যেন কোনো ধরনের পক্ষপাত বা রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত থাকে। শিক্ষকদের থেকেও চাই তারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবেন, যেন পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিতে পারে।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক : রাশেদুল ইসলাম

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র রাশেদুল ইসলাম বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর আমরা পাবিপ্রবিতে এমন একটি ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষার্থীদের মূল কণ্ঠস্বর গুরুত্ব পাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং শিক্ষকদের থেকে প্রত্যাশা হলো, তারা এমন একটি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করবেন যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো সঠিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে আমরা এখনও এমন কিছু প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হচ্ছি, যা স্বাধীন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা চাই পাবিপ্রবিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হোক, যেখানে শিক্ষার্থীরা আতঙ্ক ও ভয়ভীতির পরিবেশ থেকে মুক্ত থেকে তাদের পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। আমাদের শিক্ষকদেরও ভূমিকা রয়েছে, কারণ তারা যদি দুর্নীতিমুক্ত ও পক্ষপাতহীন আচরণ করেন, তাহলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। সর্বোপরি, আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস চাই যেখানে মেধার মূল্যায়ন হবে এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই : ওয়াহিদুজ্জামান 

গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমরা এমন এক ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে, কোনো ভয় ছাড়াই। স্বৈরাচারী সরকার থাকার সময় আমর নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারতাম না। এছাড়া, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন জরুরি। প্রযুক্তি শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য ল্যাব ও লাইব্রেরির উন্নতি চাই। প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুসুলভ, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুরুত্বের সাথে নেওয়া হবে এবং সেগুলোর দ্রুত সমাধান হবে। আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাস এমন এক জায়গা হোক যেখানে শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।