বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

কুবির ব্যায়ামাগার ছাত্রলীগের ‘টর্চারসেল’, চাবি থাকতো নেতাকর্মীদের কাছে

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কুবির ব্যায়ামাগার ছাত্রলীগের ‘টর্চারসেল’, চাবি থাকতো নেতাকর্মীদের কাছে

বেহাল দশা কুমিল্লা  বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগারটি। প্রশিক্ষক ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় ব্যায়ামাগারটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, দ্রুত নির্দিষ্ট জায়গা বন্টন, প্রশিক্ষক নিয়োগ ও উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয় করলে আবারো শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ফিরতে পারে ব্যায়ামাগারটি নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন একটি কক্ষে  ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যায়ামাগারটি চালু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। উদ্বোধনের পর রাতারাতি বেদখল হয়ে যায় ব্যায়ামাগারটি। নামে ব্যায়ামাগার থাকলেও কক্ষটির চাবি থাকতো তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের কাছে। ফলে ব্যায়ামাগারটি এক সময় পরিণত নয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয় তথা টর্চারসেলে। বিচারের নামে করে নানা সময় শিক্ষার্থীদের ধরে এনে এই ব্যায়ামাগারটিতে মারধর করতো তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ ও তাদের অনুসারীরা।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দোতলার কমনস্পেসে নিয়ে আসা হয় ব্যায়ামাগারটিকে।  ব্যায়ামাগারটি কমনস্পেসে হওয়ায় মানুষের অবাধ যাতায়াতের ফলে নারী শিক্ষার্থীরা কখনো এটি ব্যবহার করতে পারেনি। আবার পুরুষ শিক্ষার্থীরা ব্যায়াম করা অবস্থায় ক্যাফেটেরিয়ার দোতলায় নারী শিক্ষার্থীরা সাংগঠনিক কাজে গেলে বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে পড়তে হয়।

এছাড়া ব্যায়ামাগারে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ, সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা, প্রশিক্ষক না থাকা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় ব্যায়ামাগারটি শুধু নাম নিয়েই পড়ে আছে। এছাড়া যেসব যন্ত্রপাতি কেন হয়েছিল সেসব যন্ত্রপাতি ঠিকভাবে ব্যবহার না করায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

এ ব্যাপারে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, 'আমি নিয়মিত জিমে যেতাম। কিন্তু এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। অনেক উপরকণই নষ্ট, আবার কোন প্রশিক্ষক নাই। অনেকসময় জিম বন্ধ থাকে। আলাদা কোন কক্ষ না থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমি চাই, দ্রুত জিমের দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।'

এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ হোসেন সানি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারের জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। কোন যত্ন নেই। আমরা কয়েকজন মিলে কয়েকদিন গিয়েছিলাম কিন্তু যখনি যাই তখনি দেখি জিনিসপত্রগুলো একটা রুমে বন্ধ করে রাখছে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে ফোন দিলে উনি বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝামেলা চলে তাই বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝামেলার সাথে ব্যায়ামাগার বন্ধের কি সম্পর্ক? এভাবে চলতে থাকলে আসলে ব্যায়ামাগারের উপর শুধু আগ্রহই কমবে।'

এ ব্যাপারে শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন,  'আমাদের প্রশাসন থেকে যে কক্ষ দিয়েছে তা আমরা হারিয়েছি, তবে ক্যাফেটেরিয়ায় জিমের কার্যক্রম চলছে। অনেক উপকরণ নষ্ট কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই, কক্ষটি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারেও প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া জিমের প্রশিক্ষকের ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে কিছু করা সম্ভব না।'

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার মো.  মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ' এই বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা শিবিরের ব্যানারে কোন কিছু দখলে থাকবে না। জিমনেশিয়ামের কক্ষ যে ছাত্রলীগের দখলে ছিল এটা আমি আজকে জানতে পারলাম, দ্রুত এটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। জিমনেশিয়ামের যন্ত্রপাতি বাড়ানো বা নষ্ট যন্ত্রপাতি পুনরায় চালু করার ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো। কোন যন্ত্রপাতি যাতে অব্যবহৃত হয়ে পরে না থকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে জিমনেশিয়ামের জন্য প্রশিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।'

এআই