
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদ ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে একাত্মতা পোষণ করেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা৷
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকাল ৪ টায় রাবি সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে কুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক মানববন্ধন করেন রাবি শিক্ষার্থীরা৷
দীর্ঘ দুই মাসের বেশি কুয়েট ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা ও ছাত্রদলের বহিরাগত সন্ত্রাসী কতৃক সেখানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতি আজও প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি৷ বরং, প্রশাসন থেকে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে৷ যেটি একেবারে অন্যায্য এবং অযৌক্তিক।
এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী গােলাম কিবরিয়া মিশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের জন্য রাজপথে দাড়িয়েছিল। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের সকল জায়গা থেকে ফ্যাসিজমকে উৎখাত করা। কিন্তু নতুন এই বাংলাদেশে ছাত্রদের রক্তের উপর যারা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং পক্ষপাতের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা করছে। আজ ২ মাস পর কুয়েটে বলা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নাকি স্বর্ণের চেইন ডাকাতি করেছে। এ সকল ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড থেকে আপনাদের বিরত থাকতে হবে। আপনাদের প্রোফাইল কি সেটি আমরা জানি। কীভাবে রিসার্চ করে আপনারা অধ্যাপক হয়েছেন সেটি কিছুদিন আগে উঠে এসেছিল। অন্যান্যরা সাবধান হবেন। কুয়েট ভিসির আর সাবধান হওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থী ৩৭ জনকে যেভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক।
কুয়েটের যিনি ভিসি তিনি রাজনৈতিক সমতা বিধান করার যে কথা সেটিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর যেই যোগ্যতা, তিনি সেটি হারিয়েছেন। তাই আমরা আজকে বলতে চাই, আপনি নিজে পদত্যাগ করবেন নয়তো রাষ্টপতির নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে কুয়েট ভিসিকে অপসারণ করতে হবে। সবশেষে দুই মাস আগের যেই ঘটনা সেটির পরিপূর্ণ একটি তদন্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আকিল বিন তালেব বলেন, কুয়েট ক্যাম্পাস বহিরাগতরা ঢুকে শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক হামলায় উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বহিরাগতদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের পাশে না দাঁড়িয়ে হল বন্ধ করে তাদের বেকায়দায় ফেলেছে। হল বন্ধের সংস্কৃতি আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখে এসেছি। আমরা এই বাংলার জমিনে আর কোনো হল বন্ধ হওয়ার সংস্কৃতি দেখতে চাইনা। আমরা চাই অতি দ্রুত কুয়েরটের উপাচার্য পদত্যাগ করুক নয়তো তাকে বহিষ্কারের জন্য প্রয়োজন হলে আমরা জোড়ালো আন্দোলন করবো বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৪ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাসুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।