
জন্ম থেকেই হাত ও পা প্রায় অচল। নিজে থেকে ভালোভাবে করতে পারেন না কােনাে কাজ। সেই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবু। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান তিনি।
চাঁদ বাবু পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা থানার চরপাড়া গ্রামের ইটভাটার দরিদ্র শ্রমিক আবদুস সবুর আলীর ছেলে। তার মা মােছা. চম্পা খাতুন পেশায় গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে চাঁদ বড়।
উপজেলার ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমির কারিগরি বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এই অদম্য মেধাবী। তিনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ভাঙ্গুরা টেকনিক্যাল কলেজ থেকে৷
ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) রাবি শাখার বুথে বসে কথা হয় চাঁদ বাবুর সঙ্গে। চাঁদ জানান, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং অভাবের সংসারে পড়াশোনা করতে তাকে রীতিমতো জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে৷ ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন৷ বাবা সবুর আলী ইটের ভাটায় কাজ করে পরিবারের পাচঁ সদস্যের খরচ চালাতে হিমশিম খেতেন। সেখানে তাঁর পড়াশোনার খরচ চালানো যেন ছিল 'পাথরে পানি বের করার' মতাে৷
চাঁদ বাবু নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাতেন। এবিষয়ে তিনি জানান, ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোকজনের বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করে তা পল্লী বিদ্যুতের অফিসে জমা দিতেন। এ কাজের জন্য লোকজন যে টাকা দিতেন, সেই আয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালিয়েছেন তিনি৷
চাঁর আরও বলেন, পড়াশোনা চালিতে যেতে নিজের বাবা -মা ও শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা পেয়েছেন। তিনি উপজেলা পর্যায় থেকে ত্রৈমাসিক ভাবে ২৫৫০ টাকা বৃত্তি পেয়েছেন৷ তবে, সেই টাকা দিয়ে একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ চালানো ও অনেক কষ্টকর বলেও জানান তিনি৷
প্রতিবন্ধকতা যে কারো জন্য বােঝা হয় না সেটার প্রমাণ চাদবাবু। একজন প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি হাটুতে ভর করে চলা ফেরা করেন, হাতদুটো প্রায় অক্ষম তারপরও কোনাে কিছুই যেন তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি৷ পড়াশোনার অদম্য স্পৃহা ও মানসিক যে শক্তি তিনি ধারণ করেন তা সত্যিই অকল্পনীয়৷