মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

| ১ আশ্বিন ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

ছাত্র আন্দোলন প্রতিহতের চেষ্টা করা মিরপুর কলেজের উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ১৭ আগস্ট ২০২৪

ছাত্র আন্দোলন প্রতিহতের চেষ্টা করা মিরপুর কলেজের উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি

উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ইনসেটে উপাধ্যক্ষ।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করার অপচেষ্টা ও শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন প্রতিহতের সমাবেশ করার দায়ে মিরপুর কলেজের উপাধ্যক্ষ এইচএম মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন ধরে তারা এই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

৮ আগস্ট থেকে উপাধ্যক্ষের অব্যাহতির এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এই উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে মিরপুর মডেল থানায় গত ১৫ আগস্ট সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রদের এই আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে কলেজের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করেছিলেন এই উপাধ্যক্ষ।

ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মিরপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও বিরোধিতাকারী, ছাত্র হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী উপাধ্যক্ষ মাহবুবর রহমান কলেজ থেকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের (চলতি দায়িত্ব) থেকে গত ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন এইচএম মাহবুবুর রহমান। এখন তার উপাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। 

ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও বিরোধিতাকারী, ছাত্র হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান কলেজ থেকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে  : মাহমুদুল হাসান জুয়েল, শিক্ষার্থী, মিরপুর কলেজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েক শিক্ষক বলেন, কলেজ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও গত ২৭ জুলাই কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে সমাবেশ করেন এইচএম মাহবুবুর রহমান। ২৯ জুলাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক লোকজন এনে কলেজ প্রাঙ্গনে জমায়েত করেন এই উপাধ্যক্ষ।

মিরপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান জুয়েল বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্যাতনকারী উপাধ্যক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের এখনো বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। কলেজ খুলে দেওয়ার পর আমরা ছাত্র সংসদ থেকে চাপাতি ও ছুরি উদ্ধার করেছি, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও বিরোধিতাকারী, ছাত্র হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী উপাধ্যক্ষ মাহবুবর রহমান কলেজ থেকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

মিরপুর কলেজের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

এতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই কলেজের শত শত শিক্ষার্থী কলেজের আশেপাশে ও মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অংশগ্রহণ করেছিলাম। গত ১৮ জুলাই দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পর থেকে পুরো আন্দোলন জুরে মিরপুর কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য বশির আহমেদ ও ক্রীড়া শিক্ষক মিঠুন মন্ডলের পরামর্শে কলেজ ছাত্রলীগের সালমান ও তরিকুলের নেতৃত্বে অনেক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন এইচএম মাহবুবুর রহমান।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রদের এই আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে কলেজের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করেছিলেন এই উপাধ্যক্ষ।

ছাত্র আন্দোলন প্রতিহতের অভিযোগ প্রসঙ্গে ও তার পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে জানতে একাধিকবার উপাধ্যক্ষ এইচএম মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।            

জানা গেছে, উপাধ্যক্ষ এইচএম মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে গত ১১ আগস্ট শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। ১২ আগস্ট কলেজ দেয়াল লিখন ও চিত্রাংকন করেন। ছাত্র আন্দোলনে মিরপুর কলেজের শিক্ষার্থী শহীদ আকরাম হোসেন খান রাব্বিসহ সারাদেশের শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় ১৩ আগস্ট দোয়ার আয়োজন করা হয়। ১৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কলেজ ক্যাম্পাসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। ১৫ আগস্ট উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে গণস্বাক্ষর ও পথ শিশুরে মাঝে খাবার বিতরণ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।