সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনার একযুগ পূর্ণ হয়েছে গত ৮ জুলাই। ২০১২ সালের সেইদিনে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে নির্মিত আসাম স্থাপত্যরীতির এই স্থাপনাটি। দীর্ঘ একযুগ পার হলেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।
মামলার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মামলা বাতিলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে সকল কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, ‘রাজনৈতিক প্রভাবে’ ৫ বছর ধরে আটকে আছে উচ্চ আদালতের একটি আদেশ। সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট আদেশটি সিলেটের আদালতে আসার কথা ছিল। কিন্তু এই তারিখেও আদেশটি পৌঁছায়নি। যার কারণে আগামী ১২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।
এদিকে ৫ বছর ধরে মামলাটি কেবল স্থগিত করে রাখাই হয়নি, মামলাটির কোনো তথ্যও অনলাইনে মিলছে না। যার কারণে মামলাটি প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। খবর জাগো নিউজের।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থার পেছনে দায়ী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অফিস। আদেশটি উচ্চ আদালত থেকে না আনার পেছনে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ অবস্থায় মামলটির বিচারকার্য প্রলম্বিত করার কারণে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা অন্যতম আসামি দেবাংশু দাস মিঠু, আবু সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, কামরুল ইসলাম, জ্যোতির্ময় দাস সৌরভ ও অ্যাডভোকেট আলমগীর মামলাটি কোয়াশম্যান্টের (কার্যধারা বাতিল) জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও জাফর আহমদের গঠিত বেঞ্চ মামলাটির কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন।
একইসঙ্গে দুই বিচারপতি অন্তর্বর্তী এক আদেশে শাহপরাণ (রহ.) থানার মামলা নং ৯(১৩/০৭/২০১২), জিআর মামলা নং ১০০/২০১২ দণ্ডবিধির ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৪/৩২৬/৪৩৬/৪২৭ ধারায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সিলেটের চলমান মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে রুল ইস্যু করেন। ৬ মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের জবাবের পর উচ্চ আদালত থেকে কোনো আদেশ এখনো সিলেটের আদালতে আসেনি। এমনকি অনলাইনে উচ্চ আদালতের আদেশের কোনো তথ্য নেই।
উচ্চ আদালত থেকে আদেশটি সিলেটে না আসায় ২০১৯ সাল থেকে মামলাটি স্থগিত রয়েছে। সর্বশেষ ১২ আগস্ট সিলেটের আদালতে আদেশটি আসার কথা ছিল। এদিন আদালত মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু এই তারিখেও আদেশটি আসেনি।
অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের কারণে ১২ আগস্ট মামলার আসামি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের পক্ষের আইনজীবী আদালতে সময় চেয়েছেন। আদালত আগামী ১২ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এই মামলার ৩২ জন আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন ২১ জন। আর বাকি ১১ জন এখনো পলাতক রয়েছেন।