সাত কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। যদিও এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তাদের বিরোধের ব্যাপারটি গোপন নেই। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা বৈঠকও করেছেন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। তাই সাত কলেজ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত- এমন যুক্তি দেখিয়ে সাত কলেজ কমিটির অনুমোদনের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিজেদের হাতে নিতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ লক্ষ্যে, গত জুলাই মাস থেকে কলেজগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এর অংশ হিসেবে ঢাকা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজেও যান তারা। তবে, এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৮ জুলাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপরও বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা দেখানো বন্ধ করেনি ঢাবি ছাত্রলীগ।
প্রসঙ্গত, ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছাত্রসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদ্বয়। জানা গেছে, এর ভিত্তিতে সাত কলেজ নিয়ে তোড়জোড় বাড়ান তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে হওয়ার সুযোগ নেই। জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এ বিষয়ে গঠনতন্ত্র অনুসরণের কথা বলছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সাত কলেজের বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে যাদের নিয়ে এত টানাপোড়েন, সেই সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতারাই বলছেন, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসতে চান না। তাছাড়া, গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও এটি ঘটার সুযোগ নেই বলে দাবি তাদের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাত কলেজ জেলা ইউনিটের মর্যাদাসম্পন্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার অর্থ তারা উপজেলা ইউনিটে পরিণত হবেন। এদিকে সাত কলেজ ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধীনস্থ করার বিষয়ে সৈকতের বক্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। এ সময় তারা কেন্দ্রের অধীনে থাকতে চান- এমন স্লোগান দেন। পরদিন সৈকতের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা ঢাবি ছাত্রলীগের প্রহসন, মানি না মানব না’ ‘সাদ্দাম-ইনান পরিষদ, সবার সেরা পরিষদ ইত্যাদি স্লোগান দেন। জানা গেছে, এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাযহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে নেতারা নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে ঐক্যসূচক ক্যাপশন দিয়ে একসঙ্গে ছবিও প্রকাশ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, এক পরিবারে থাকলে ছোটখাট মনোমালিন্য হয়েই থাকে। এটি যাতে আমাদের পরিবারের মধ্যেই থাকে, তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের একমাত্র অভিভাবক, আমরা তার সিদ্ধান্তই মেনে নিই। সাত কলেজের বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছানো গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত দেবেন, তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।