শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

| ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

Campus Bangla || ক্যাম্পাস বাংলা

শিশুরা যেন হেরে না যায়

মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

শিশুরা যেন হেরে না যায়

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষার মেরুদণ্ড। অথচ এই মেরুদণ্ডকে সুদৃঢ়করণে আমাদের প্রচেষ্টা খুবই সামান্য। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১১ মাস শিশুদের পড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। জানিনা এই সংক্ষিপ্ত সময়ে শিশুদের কতটুকু শিখাতে পেরেছি। তবে, আন্তরিকভাবে আমি আমার জায়গা থেকে এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য চেষ্টা করেছি।

আমরা যারা শিক্ষক তাদের প্রত্যেককে মনে রাখা উচিত, আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী। কারণ, আমরা পৃথিবীর সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ নিয়ে কাজ করি। যে সম্পদ আগামীতে পৃথিবীকে পথ দেখাবে। আমাদের আরও মনে রাখা উচিত, আমরা (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্পাপ পবিত্র সম্পদ নিয়ে কাজ করি। অন্যান্য পেশার মানুষেরা তাদের কর্মে যদি ফাঁকি দেয়, তাহলে তারা যতটুকু অন্যায় করবে একজন শিক্ষক একই রকম ফাঁকি দিলে সেই অন্যায়টা হাজার গুণ হয়ে যাবে। কারণ একটাই, সেটা হলো নিষ্পাপ শিশুদের সঙ্গে ফাঁকিবাজি করা বড় অন্যায়।

অন্যান্য পেশার মানুষেরা পাপী আদম সন্তানকে ঠকায়। কিন্তু আপনি শিক্ষক, আপনি ঠকাচ্ছেন নিষ্পাপ আদম সন্তানকে। একজন শিক্ষক হবেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব, যার প্রত্যেকটি কাজ হবে শিশুদের তথা সমাজের জন্য অনুকরণীয়। অথচ আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক এখন কেবল চাকুরী করেন, শিক্ষকতা করেন না। অনেক শিক্ষক জানেনও না যে, চাকুরী এবং শিক্ষকতা এক নয়। আমরা জানি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে রাষ্ট্রের উচ্চ দপ্তরগুলোতে একটু অবহেলা আছে। এর অন্যতম কারণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংখ্যায় অনেক। দায়িত্বের প্রতি একজন প্রাথমিক শিক্ষকের যতটা আন্তরিক হওয়া দরকার ছিল, সেটা আমরা করতে পারিনা। কতিপয় শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে গোটা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়েছে। শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, সরকারের সঙ্গে জিততে গিয়ে আমরা যেনো শিশুদের পরাজিত হওয়ার দিকে ঠেলে না দেই।

আবার সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় সুন্দর ভাবে পরিচালনা জন্য একটা ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্যদের নিজ নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক হতে হবে। কমিটির সভাপতিকে বিএ পাশ হতে হয়। সেরকম যোগ্য অভিভাবক পাওয়া না গেলে পাশ্ববর্তী মাধ্যমিক স্কুলের একজন সম্মানিত শিক্ষককে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হবে। কিন্তু এখন স্কুল কমিটির সভাপতি ও নেতৃত্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়। এই মানুষগুলোর কোনো সন্তান স্কুলে পড়ে না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা প্রভাব বিস্তার করে কেবল স্কুলের সাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করেন। স্কুলের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেন স্কুল কমিটির সদস্যরা। কারণ, তাদের সন্তানদের অধিকাংশই স্কুলে পড়ে না। তারা অন্যের শিশুর হক নষ্ট করেন। যেহেতু, তাদের সন্তানরা স্কুলে পড়েনা, সেহেতু স্কুলের ও শিশুদের ব্যাপারে কমিটির সদস্যদের আন্তরিকতাও কম থাকে। সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল।